ঢাকা ১১:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সদরপুরে খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ১২:১৩:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮৪ বার পড়া হয়েছে

শিমুল তালুকদার, সদরপুর থেকে :: শীত মানে এক ভিন্ন আনন্দ। বিশেষ করে গ্রামবাংলায় শীতের সবচেয়ে বেশী প্রিয় খেজুর গাছের রস। যদিও আজকাল খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে এরপরেও এদেশের গ্রামগঞ্জের রাস্তা ও বাড়িতে সারি সারি দেখা মিলে খেজুর গাছের। শীত এসেছে। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফরিদপুর জেলার গাছিরা। ইতি মধ্যেই খেজুর গাছের বাকল তুলে চেঁছে ছুলে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ উপযুক্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন স্থানীয় গাছিরা।

প্রতি বছর শীতের আগাম বার্তা আসার সাথে সাথেই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেন গাছিরা
সেই ধারাবাহিকতায় খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন গাছীরা।
এ জন্য গাছ থেকে বাকল তুলা, নালি লাগানো, গাছে হাড়ি পাতাসহ আনুশঙ্গীক কাজ করছেন তাঁরা।

প্রতি বছর শীত মৌসুমে খেজুরের রসের পিঠা পুলি, পায়েশ ও বিভিন্ন প্রকার পিঠা খাওয়ার ধুম পরে যায়। এ ছারাও মুরি দিয়ে খেজুর রস খাওয়ার মজাটাই আলাদা। ফরিদপুর জেলার খেজুরের রসের সুনাম দীর্ঘদিন যাবৎ। এবছরে জেলার সদরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চলছে খেজুর গাছ থেকে রস বেড় করার উৎসব। একেকজন গাছি এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন গাছ থেকে রস বেড় করার জন্য ব্যস্ততম সময় পার করছেন। শীত কিছুটা কম হলেও অনেক গ্রামের গাছি গাছ থেকে রস বেড় করে গ্রামের বাজারে ও প্রতিবেশীদের কাছে হাঁড়ির রস বিক্রি করছে।

উপজেলার শৌলডুবী গ্রামের মিলন গাছি বলেন এবছর ৪০ টির মত গাছ রেডি করেছি। রস সংগ্রহের জন্য ইতিমধ্যেই গাছ তৈরি করতে কাজ করছি। খুব শিগরি গাছে হাড়ি লাগানো হবে। ভেজালের যুগে আর ফ্রেস খেজুরের গুর পাওয়া খুব দুরহ ব্যাপার। সবাই এখন চিনির মিশ্রনে গুড় তৈরি করেন। প্রকৃত পক্ষে ফ্রেস এক কেজি খেজুর গুরের দাম পরবে কমপক্ষে ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। অথচ ক্রেতারা ২০০ টাকার বেসি দিয়ে খেজুরের গুর কিনতে অনাগ্রহী। ফলে গুরের মধ্যে গাছিরা ভেজাল দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি কোন প্রকার ভ্যাজাল ছারাই ফ্রেস গুর তৈরী করি। কতটাকা দরে কেজি বিক্রি করেন জানতে চাইলে বলেন, আমার নিকট প্রতি বছর ঢাকা হ বিভিন্ন এলাকা থেকে কিছু সৌখিন ব্যক্তিরা আগাম খেজুরের গুরের অর্ডার দিয়ে থাকেন। তাদের জন্য প্রতি বছর আমি ফ্রেস গুর তৈরী করি এবং তাদের কাছে প্রতি কেজি ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেন বলে জানান তিনি।

গাছি সুমন মিয়া বলেন, আমি এবার ২৫ টি খেজুর গাছ রস সংগ্রহের জন্য তৈরি করছি। রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে। অল্প কয়েক দিন পরেই রস সংগ্রহের জন্য গাছে হাড়ি লাগানো হবে। গুরের পরিবর্তে আমি প্রতি বছর কাঁচা রস প্রতি লিটার ১০০ টাকায় বিক্রি করি। বর্তমানে বেশী দামে খাটি খেজুর গুর কেনার লোকের অভাব। কাঁচা রস বিক্রিতে ঝামেলা যেমন কম আবার ক্রেতাও বেশী। তাই এখন আর গুর তৈরীর ঝামেলায় যাননা বলে জানান তিনি।

প্রতি শীত মৌসুম ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় গাছিরা খেজুর রস সংগ্রহ করে পাটালিগুর, ঝোলাগুরসহ বিভিন্ন প্রকার গুর তৈরী করেন। অপর একটি চক্র প্রতি বছর ভ্যাজাল গুর তৈরী করে বাজারজাত করেন। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনা করে অনেককে জেল জরিমানা করেন। তারপরও থেমে নেই ভ্যাজাল গুর তৈরীর প্রতিযোগিতা। এই ভেজাল গুর খেয়ে অনেকে বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। থেকে যাচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। এজন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ভেজাল গুর তৈরী বন্ধ করতে প্রত্যাশা সদরপুর উপজেলা বাসীর।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

সদরপুরে খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

আপডেট সময় : ১২:১৩:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩

শিমুল তালুকদার, সদরপুর থেকে :: শীত মানে এক ভিন্ন আনন্দ। বিশেষ করে গ্রামবাংলায় শীতের সবচেয়ে বেশী প্রিয় খেজুর গাছের রস। যদিও আজকাল খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে এরপরেও এদেশের গ্রামগঞ্জের রাস্তা ও বাড়িতে সারি সারি দেখা মিলে খেজুর গাছের। শীত এসেছে। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফরিদপুর জেলার গাছিরা। ইতি মধ্যেই খেজুর গাছের বাকল তুলে চেঁছে ছুলে খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ উপযুক্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন স্থানীয় গাছিরা।

প্রতি বছর শীতের আগাম বার্তা আসার সাথে সাথেই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেন গাছিরা
সেই ধারাবাহিকতায় খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছেন গাছীরা।
এ জন্য গাছ থেকে বাকল তুলা, নালি লাগানো, গাছে হাড়ি পাতাসহ আনুশঙ্গীক কাজ করছেন তাঁরা।

প্রতি বছর শীত মৌসুমে খেজুরের রসের পিঠা পুলি, পায়েশ ও বিভিন্ন প্রকার পিঠা খাওয়ার ধুম পরে যায়। এ ছারাও মুরি দিয়ে খেজুর রস খাওয়ার মজাটাই আলাদা। ফরিদপুর জেলার খেজুরের রসের সুনাম দীর্ঘদিন যাবৎ। এবছরে জেলার সদরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চলছে খেজুর গাছ থেকে রস বেড় করার উৎসব। একেকজন গাছি এলাকা ভিত্তিক বিভিন্ন গাছ থেকে রস বেড় করার জন্য ব্যস্ততম সময় পার করছেন। শীত কিছুটা কম হলেও অনেক গ্রামের গাছি গাছ থেকে রস বেড় করে গ্রামের বাজারে ও প্রতিবেশীদের কাছে হাঁড়ির রস বিক্রি করছে।

উপজেলার শৌলডুবী গ্রামের মিলন গাছি বলেন এবছর ৪০ টির মত গাছ রেডি করেছি। রস সংগ্রহের জন্য ইতিমধ্যেই গাছ তৈরি করতে কাজ করছি। খুব শিগরি গাছে হাড়ি লাগানো হবে। ভেজালের যুগে আর ফ্রেস খেজুরের গুর পাওয়া খুব দুরহ ব্যাপার। সবাই এখন চিনির মিশ্রনে গুড় তৈরি করেন। প্রকৃত পক্ষে ফ্রেস এক কেজি খেজুর গুরের দাম পরবে কমপক্ষে ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা। অথচ ক্রেতারা ২০০ টাকার বেসি দিয়ে খেজুরের গুর কিনতে অনাগ্রহী। ফলে গুরের মধ্যে গাছিরা ভেজাল দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি কোন প্রকার ভ্যাজাল ছারাই ফ্রেস গুর তৈরী করি। কতটাকা দরে কেজি বিক্রি করেন জানতে চাইলে বলেন, আমার নিকট প্রতি বছর ঢাকা হ বিভিন্ন এলাকা থেকে কিছু সৌখিন ব্যক্তিরা আগাম খেজুরের গুরের অর্ডার দিয়ে থাকেন। তাদের জন্য প্রতি বছর আমি ফ্রেস গুর তৈরী করি এবং তাদের কাছে প্রতি কেজি ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেন বলে জানান তিনি।

গাছি সুমন মিয়া বলেন, আমি এবার ২৫ টি খেজুর গাছ রস সংগ্রহের জন্য তৈরি করছি। রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে। অল্প কয়েক দিন পরেই রস সংগ্রহের জন্য গাছে হাড়ি লাগানো হবে। গুরের পরিবর্তে আমি প্রতি বছর কাঁচা রস প্রতি লিটার ১০০ টাকায় বিক্রি করি। বর্তমানে বেশী দামে খাটি খেজুর গুর কেনার লোকের অভাব। কাঁচা রস বিক্রিতে ঝামেলা যেমন কম আবার ক্রেতাও বেশী। তাই এখন আর গুর তৈরীর ঝামেলায় যাননা বলে জানান তিনি।

প্রতি শীত মৌসুম ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় গাছিরা খেজুর রস সংগ্রহ করে পাটালিগুর, ঝোলাগুরসহ বিভিন্ন প্রকার গুর তৈরী করেন। অপর একটি চক্র প্রতি বছর ভ্যাজাল গুর তৈরী করে বাজারজাত করেন। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনা করে অনেককে জেল জরিমানা করেন। তারপরও থেমে নেই ভ্যাজাল গুর তৈরীর প্রতিযোগিতা। এই ভেজাল গুর খেয়ে অনেকে বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। থেকে যাচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। এজন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ভেজাল গুর তৈরী বন্ধ করতে প্রত্যাশা সদরপুর উপজেলা বাসীর।