লিবিয়া গেমঘরে ভাঙ্গার দুই যুবককে গুলি করে হত্যা

- আপডেট সময় : ০২:৪৫:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৫০ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :: মিন্টু ও হৃদয় একই গ্রামের। দুজনের পিতার মধ্যে ছিল বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠতা। সেই সুত্রতায় গত দুই মাস আগে মিন্টু হাওলাদারের ছেলে হৃদয় ও মুজিবুর রহমানের ছেলে বাংলাদেশ থেকে ইতালির পথে পারি জমায় দুবাই সৌদি আরব হয়ে লিবিয়ার গেম ঘরে।
কিন্তু বিধি বাম! দালালদের চাহিদা মোতাবেক দুই কিস্তিতে ১৬ লাখ করে টাকা পৌঁছে দিলেও নতুন করে টাকা না দেওয়ায় দুই যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ পৃথক দুটি পরিবারের।
হত্যার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই কান্নার রোল পড়ে যায় নিহত দুই যুবক হৃদয় ও আকাশের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের কুমারখালি গ্রামে।
লিবিয়ার গেম ঘরে মাফিয়াদের হাতে গুলিতে নিহত গ্রামের দুই যুবক। এমন খবর শুনতেই গোটা ইউনিয়নের ও পার্শ্ববর্তী এলাকার শত শত নারী পুরুষ ভিড় জমিয়ে তোলে নিহতের বাড়িতে। স্বজনের সান্তনা দিলেও কিছুতেই মানছে না পরিবার ও স্বজনদের আহাজারী কান্নার রোল।
নিহত হৃদয়ের বড় ভাই মোকলেস হাওলাদার জানান, ইতালির যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত দুই মাস আগে তার ছোট ভাই হৃদয় হাওলদার ও একই গায়ের মুজিবর চাচার ছেলে আকাশ দুজনেই বাংলাদেশ ত্যাগ করে। গত চারদিন ধরে তাদের সাথে সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বাড়ির লোকজন সকলে উদ্বিগ্নতার মধ্য দিয়ে কাটছিল। কিন্তু আজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছোট ভাই ও আকাশের হত্যার বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ার পর ঘটনাটি তার পরিবারের নজরে আসে। মুহূর্তের মধ্যে তারা বিষয়টি বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানালে পরবর্তী সকল তথ্য ও ঘটনাটি দেখার জন্য আশ্বস্ত করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা রহমান জানান, ভাঙ্গা উপজেলা, শিবচর ও রাজৈর উপজেলায় স্বশিক্ষিত বেকার যুবকদের টার্গেট করে ইতালিতে পাঠানো একটা চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু দিন দিন তাদের দৌরাত্ম এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের টিকিটা ধরতে পারছে না কেউ। আজ গাঁয়ের দুটো সন্তানকে বিদেশ যাওয়ার গেমখেলায় নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হলো। এর বিচার করবে কে?
শোকে নিস্তব্ধ হয়ে পড়া মিন্টু হাওলদার জানান, তার বন্ধু আবুল কালাম তাকে মোবাইলফোনে জানিয়েছিল আমার ছেলে আকাশ ইতালি যাবে। তোর ছেলেকে পাঠাতে পারবি কিনা? তার কথায় আশ্বস্ত হয়ে আমি আমার সন্তান হৃদয়কে ও মুজিবরের ছেলে আকাশকে ইতালিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম দুটি পরিবার। এজন্য তিনি দুই কিস্তিতে দালাল আলমাস গংদের ১৬ লাখ টাকা পরিশোধ করে ছিলাম। কিন্তু দালালরা নতুন করে টাকা দাবী করলে আমি দিতে না পারায় ওরা সাগরের পারে আমার সন্তানকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে বলতেই সন্তান হারানোর বেদনায় লোকসমক্ষে জান হারিয়ে ফেলেন অসহায় পিতা।
আকাশের পিতা মুজিবুর রহমান কান্নাজড়িত কন্ঠে বারবার ছেলের লাশ উদ্ধার করে দেশের মাটিতে শেষ বারের মত আনতে ও দেখার জন্য কেঁদে কেঁদে বলেন, দালারা টাকা চেয়েছিল টাকাও দিলাম কিন্তু তাজা দুটো জীবন কেন ওরা কেরে নিলো। আমি এর বিচার চাই। বর্তমান সরকার প্রধানের কাছে তিনি ছেলে হত্যার বিচার দাবী করেন।
এবিষয়ে ভাঙ্গা থানার অফিসার ইন চার্জ মোকছেদুর রহমান বলেন, পুলিশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থেকে খবরটা জানতে পারে। তবে এবিষয়ে পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ কেউ করেনি। পুলিশের কাছে কোন অভিযোগ আসলে অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবে বলে তিনি জানান।